|
নোয়াখালী জেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা নোয়াখালী। নোয়াখালীর লোকজন বেশ পরিশ্রমী এবং যথেষ্ঠ সৃজনশীল। বাংলাদেশের মধ্যে নোয়াখালী জেলাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ট্রল করা হয়। এর অন্যতম কারন হল এখানের কথ্য্ ভাষার উচ্চারনশৈলী বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা। নোয়াখালী জেলার আয়তন ৪২০২ বর্গ কিলোমিটয়ার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৮০০ জন। নোয়াখালী জেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলা, পসচিমে পক্ষীপুর ও ভোলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। নয়টি উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী জেলা গঠিত। এগুলো হল নোয়াখালী সদর, হাতিয়া, সোনাইমুড়ি, সেনবাগ, সুবর্নচর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানিগঞ্জ এবং কবিরহাট। নোয়াখালী জেলার মধ্যে দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী বয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মেঘনা, ডাকাতিয়া এবং ছোট ফেনী নদী।
ইতিহাস ঐতিহ্য
বৃটিশ আমলের প্রথম দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলাদেশে প্রথমে যে ১৯ টি এবং পরবর্তীতে ১৪ টি জেলা গঠিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি জেলা হল নোয়াখালী। আশেপাশের জেলা লক্ষীপুর, ফেনী সহ বেশ কিছু এলাকা বৃহত্তর নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। নোয়াখালী জেলার জনগন বেশ ইসলামপ্রিয়। খেলাফত আন্দোলন এবং ওহাবী আন্দোলনের সাথে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। বহুকাল পূর্ব থেকে বাংলাদেশের বহু জেলার মসজিদের ইমাম এবং মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি বিরাট অংশই নোয়াখালী জেলা থেকে আগত।
নোয়াখালী জেলার নাম পূর্বে নোয়াখালী ছিল না। এ জেলার নাম পূর্বে ছিল ভুলুয়া। ঐতিহাসিকরা মনে করেন এককালে ত্রিপুরা থেকে ডাকাতিয়া নদীর প্রবাহ এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ ভয়াবহ বন্যা থেকে রক্ষা পেতে ডাকাতিয়া নদীর প্রবাহ মেঘনার সাথে যুক্ত করার জন্য বিশাল এক খাল খনন করা হয়। নতুন খনন করা এ খালের নাম স্থানীয় ভাষায় ছিল নয়া খাল বা নোয়াখাল। এ খালের জন্যই এ অঞ্চলের নাম নোয়াখালী হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
নোয়াখালী জেলা গঠিত হয়েছিল বৃটিশ শাসনামলের একদম প্রথম দিকে কোম্পানির শাসনের সময়। ১৯৮৪ সালে সরকারী সিধান্ত অনুযায়ী দেশের সবগুলো মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয় যার ফলে বৃহত্তর নোয়াখালী ভেঙ্গে নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষীপুর জেলা গঠিত হয়।
দর্শনীয় স্থান
প্রাচীন এ জেলাটিতে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত মুছাপুর ক্লোজার, সোনাইমুড়ি উপজেলায় অবস্থিত গান্ধী আশ্রম, ধর্মপুর গ্রামে প্রায় ২৫ একর জমির উপর নির্মিত নয়নাভিরাম নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ড পার্ক, সোনাইমুড়ি উপজেলায় অবস্থিত বজরা শাহী মসজিদ প্রভৃতি। তবে নোয়াখালীর সবচেয়ে আকর্ষনীয় আর মনমুগ্ধকর স্থানটি হল নিঝুম দ্বীপ। মেঘনা নদীর জলরাশি দ্বরার আবদ্ধ এ দ্বীপের একপাশে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এ দ্বীপের সবচেয়ে বড় আকর্ষন হল হরিনের অভয়অরণ্য। প্রচুর হরিণ রয়েছে এখানের বনে জঙ্গলে যা অনেক সময় লোকালয়েও প্রবেশ করে।
যাতায়াত
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বেশ কিছু বাস নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায়। এছাড়া সায়েদাবাদ এবং জিগাতলা থেকে একুশ এক্সপ্রেসের এসি বাস সরাসরি নোয়াখালী যায়। ট্রেনেও যাওয়া যায়। কমলাপুর স্টেশন থেকে শুধু বৃহস্পতিবার বাদে বাকি ছয়দিন উপকুল এক্সপ্রেস বিকাল ৪ টা ২০ মিনিটে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
নোয়াখালী স্থানীয় খবরের কাগজ পরতে এখানে ক্লিক করুন।
For any suggestions or comment, please contact us. Thanks |